অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাসের শুরু থেকে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে বুধবার। দেশজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫০২ জন। তার মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশই হচ্ছে মেলবোর্নের রাজ্য ভিক্টোরিয়ায়। ওই রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮৪ জন। এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন ১২৮ জন।
এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় একজন বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে এসে মেলবোর্নে হোটেল কোয়ারেন্টিন শেষ করেছিলেন। তারপর সিডনিতে কাজে যোগদানের দুই দিনের মাথায় করোনা পরীক্ষার পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তিনি ভালো আছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাসের এটা দ্বিতীয় প্রবাহ। প্রথম প্রবাহ প্রায় সামলিয়ে নিয়েছিল দেশটি। সংক্রমণ ছিল নিয়ন্ত্রিত, কমে প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা। পুরোপুরি নির্মূলের প্রত্যাশা নিয়ে দেশজুড়ে নতুন কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল দেশটির সরকার। কিন্তু গত মাসের শেষ দিক থেকে আবার বাড়তে থাকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব।
প্রথম প্রবাহে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক শহর সিডনিতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দেশটির আটটি রাজ্য ও অঞ্চল থেকে অনেক বেশি। কিন্তু এবার এই মহামারির ভরকেন্দ্র হচ্ছে মেলবোর্ন শহর। ২২ জুলাই বুধবার সিডনির রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসে মোট শনাক্তকরণ হয়েছে ১৬ জন। এর আগে এই রাজ্যে দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণে একটি পাবে (মদালয়) যাওয়া–আসা প্রায় ৫৩ জনকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত পাওয়া গেছে।
আক্রান্ত ব্যক্তিদের জিনোম সিকোয়েন্সিং বা জিন নকশা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, আক্রান্ত ব্যক্তিরা ভিক্টোরিয়া রাজ্যের সংযুক্ত। তাঁরা কোনো না কোনোভাবে ভিক্টোরিয়া রাজ্যের ঝুঁকিপূর্ণ করোনাভাইরাস এলাকা থেকে ঘুরে এসেছেন। ফলে এবারের সংক্রমণ ঠেকাতে ভিক্টোরিয়া রাজ্যের সঙ্গে দেশটির সব রাজ্যের সীমান্ত বন্ধ রয়েছে।
তবে ঠিক কীভাবে ভিক্টোরিয়া রাজ্যে ভাইরাসটি এত দ্রুত আবার ছড়িয়ে পড়ছে, তা নিয়ে চুলচেরা তদন্ত চলছে। বুধবার এক তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশটির নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা যাঁরা বাইরে থেকে এসে হোটেল কোয়ারেন্টিনে ছিলেন, তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেননি। তাঁদের দেখভাল করার জন্য যে প্রহরী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তাঁরাও তাঁদের কাজের নিয়ম মেনে চলেননি।
তাঁরা নিয়ম ভেঙে হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষের সঙ্গে শয্যাসঙ্গী হয়েছেন, এমন অভিযোগও উঠেছে। এবারের সংক্রমণ ছড়ানোর পেছনে বিষয়টি অন্যতম কারণ বলে তদন্তে উঠে এসেছে। ভাইরাসটির গতিবিধি, ধরন, গড়ন বোঝার জন্য ব্যাপক হারে জিন নকশা উন্মোচন করে যাচ্ছে দেশটি। ভিক্টোরিয়া রাজ্যে বর্তমানে লকডাউন চলছে।
রাজ্যটিতে মাস্ক ব্যবহার করা এখন বাধ্যতামূলক। নিউ সাউথ ওয়েলসে ২৪ জুলাই থেকে বিধিনিষেধ আরও কঠিন হচ্ছে। গণপরিবহনে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা করছে রাজ্যের সরকার।
ভিক্টোরিয়া রাজ্যে লকডাউন থাকার পরও করোনাভাইরাস সংক্রমণ উত্তরোত্তর বাড়তে থাকায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী (প্রিমিয়ার) ড্যানিয়েল অ্যান্ড্রুস হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। ৩ হাজার ৮১০ জন পজিটিভ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে অসুস্থ হলেও ৩ হাজার ৪০০ জন নিজেকে ঘরবন্দী করেননি।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে দেশটি সরকার ইতিবাচক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। এখন থেকে ভিসা–সংক্রান্ত কিছু বাড়তি সুবিধা পাবেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা। এ করোনাকালে দেশটির নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য দেওয়া প্রণোদনা আগামী বছর মার্চ মাস পর্যন্ত বর্ধিত করেছে।
Posted ১২:৫৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
protidinerkushtia.com | editor