আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হয় না!
এই বুঝি আসবে, কিন্তু সে আর আসেই না। দিন থেকে রাত প্রতিমুহুর্তে তার জন্য পরিবারের মানুষ গুলোর অপেক্ষার প্রহর এ যেন শেষই হয় না। নিখোঁজের পাঁচ বছর পূর্ন হলো। কিন্তু তার ফিরে আসার রাস্তা যেন আমাদের কারও জানা নেই কান্না ভরাকষ্ঠে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসের আলোচনা সভায় এভাবেই কথা বলছিলেন কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া ও সবুজের মা সাহিদা বেগম।
জিনিয়া আরও বলেন,সে কোথায় আছে জানি না,কিন্তু ছেলে মেয়েরা তার বাবাকে খোঁজে। বছরের পর বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সবার সাথে বার বার করে কথা বলেছি। কিন্তু তার খোঁজ এখনও মেলেনি।
রোববার সকালে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘মায়ের ডাক ও হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স কুষ্টিয়া জেলা নেটওয়ার্কের আয়োজনে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তারা।
এতে নেটওয়ার্কের ফোকাল পার্সন মানবাধিকার কর্মী হাসান আলী’র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গুমের শিকার ব্যক্তি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ ও মেডিকেল শিক্ষার্থী জাকির হোসেনের পরিবারের সদস্যদের শোকার্ত-বেদনা ও মানবেতর জীবনের চিত্র তুলে ধরে অবিলম্বে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান তারা।
গুমের শিকার শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজের পরিবারের পক্ষ থেকে এতে বক্তব্য রাখেন,সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া, মা সাহিদা বেগম, শিশু কন্যা শেখ সুমাইয়া ফেরদৌস, ছেলে সাহেদ হোসেন ও নিখোঁজ মেডিকেল শিক্ষার্থী জাকির হোসেনের বড় ভাই আতাউর রহমান।
সবুজের মা সাহিদা বেগম সন্তান হারানোর কষ্ট ব্যক্ত করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি আরও বলেন,‘আমার ছেলে সবুজ গুম হওয়ার মধ্যদিয়ে বুঝলাম যে এই ঘটনা কতবড় অপমান ও বেদনা দায়ক,আমার সবকিছু থেকেও কিছুই নেই, ছেলের রেখে যাওয়া সম্পত্তি মা স্পর্শ করতে পারেনা, এতকিছু থাকতেও আমাকে অভাবের যন্ত্রনায় ছটফট করতে হচ্ছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কড়জোড়ে অনুরোধ করছি, আমার ও আমার পরিবারের প্রতি একটু দয়ীশীল দৃষ্টি দিন। আমাদের বাঁচতে দিন’।
এছাড়াও আলোচনা সভায় জেলার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার ব্যক্তিগণ নিজ নিজ অবস্থান থেকে ‘মায়ের ডাক ও হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স নেটওয়ার্কের সাথে সংগ্রামরত মানবাধিকার কর্মীগণ সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, ২০০৬ সালের ২০ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অনুষ্ঠিত আন্তজার্তিক কনভেশনে উত্থাপিত গুম হওয়া ব্যক্তি সুরক্ষায় গৃহীত প্রস্তাবনায় বাংলাদেশকে অনুস্বাক্ষরের দাবি জানানো হয়।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে মায়ের ডাক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হোক পরিবারের কাছে সেই সাথে বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের নামে যে সব ব্যক্তিদের বিচার বহির্ভুত হত্যা ও হেফাজতে নির্যাতনসহ সকল রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বন্ধের দাবি করা হয়।
Posted ৩:১৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ৩০ আগস্ট ২০২০
protidinerkushtia.com | editor