নিজস্ব প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ায় লোডশিডিংয়ে বেড়েছে হাতপাখার কদর
তোমার হাতপাখার বাতাসে, প্রাণ জুড়িয়ে আসে, কিছু সময় আরও তুমি থাকো আমার পাশে…’ শিল্পী আকবরের গাওয়া এ গানটির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় হাতপাখার কথা। শুধু তাই নয়, ‘আমার বাড়ির তালের পাখা, শীতকালেতে যায় না দেখা, আমার পাখার এমন গুন, বাতাস খেলে আসে ঘুম’ গ্রাম বাংলার হারাতে বসা এমন ছন্দও এখন সামনে এসেছে। লোডশেডিং আর ভ্যাপসা গরমের কারণে গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে হাতপাখার কদর।
২৪ ঘন্টায় নির্ধাতি সময় লোডশেডিং থাকার কথা বলা হলেও জ্বালানী সংকটের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। দেশব্যাপী বিদ্যুৎ চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ সংকট। এ কারণেই চলছে অধিক সময় লোডশেডিং। জৈষ্টের শেষ দিকেও হচ্ছে না বৃষ্টি, সেই সাথে বেড়েছে অনির্ধারিত লোডশেডিং। আর একারণে ভ্যাপসা গরমে বেড়েছে তালপাখার কদর।
রোদ-মেঘের খেলায় বৃষ্টি না হওয়ায় আবহাওয়ার বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় এলাকায় বেড়েছে গরমের তীব্রতা। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে লোডশেডিং। এ অবস্থায় কুষ্টিয়া তীব্র গরমের কারণে বেড়েছে তালপাতার তৈরি হাতপাখার কদর। নিয়ম অনুযায়ী লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও দিনে রাতে একাধিক বার হচ্ছে লোডশেডিং। দিনের বেলা লোডশেডিং হওয়াতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। সন্ধ্যায় লোডশেডিংয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি আর রাতের বেলায় তীব্র গরমে কোমলমতি শিশুরা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গরমের কবল থেকে স্বস্তি পেতে রাতদিন চলছে হাত পাখার ব্যবহার। মা-বাবা না ঘুমিয়ে সন্তানের ঘুম নিশ্চিত করতে ব্যস্ত।
সম্প্রতি সময়ে সোলার ও ব্যাটারিচালিত চার্জিং ফ্যানের কারণে হাতপাখার প্রচলন প্রায় বিলুপ্ত। লোডশেডিংয়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এ সকল ইলেক্ট্রনিক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানান একাধিক ক্রেতা। তাই স্বল্প মূল্যে প্রচন্ড গরমে স্নিগ্ধ শীতল বাতাসের পরশ পেতে এলাকার মানুষ কিনছেন হাতপাখা। সম্প্রতি সময়ে হাট-বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা মেলে।
কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউরিয়া মোল্লা পাড়া এলাকার হানিফ মোল্লার ছেলে রিপন মোল্লা বলেন, গরম ও লোডশেডিং থেকে একটু শান্তি পেতে দুটো তালপাতার তৈরি হাতপাখা ক্রয় করলাম। দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির এই সময়ে হাতপাখার দাম মোটামুটি ঠিক আছে। তবে শিডিউল মেনে লোডশেডিং দিলে অনেক ভালো হতো।
দবির মোল্লা সুপার মার্কেটের মুদির দোকানের ব্যবসায়ী মনোহার বলেন, আগে আমার গ্রামের অনেকেই হাতপাখা তৈরি ও বিক্রয়ের কাজ করতো। এখন ইউনিয়নে হাতে গোনা দু-একজন করে। অধিকাংশ পাখা বাজারের দোকানগুলোতে পাইকারি দামে বিক্রয় করা হয়। আমার দোকানে হাত পাখা আছে আমিও বিক্রি করি। আগে তেমন একটা বিক্রি হতো না এই কয়দিনে আমার হাতপাখা সব বিক্রি হয়ে গেছে।
এদিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম বাজার মালিক এখলাস কারিগর বলেন, উজানগ্রাম বাজারের প্রতি শনিবার একাধিক ব্যবসায়ী তালের পাখা বিক্রয় করে থাকেন। তবে একজন তালপাখা ব্যবসায়ী বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে এবার তালপাখার চাহিদা বেড়ে পিস প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রয় করছি। শিডিউল মেনে লোডশেডিং দেওয়া হলে আমরা সকলেও উপক্রিত হতাম।
Posted ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৬ জুন ২০২৩
protidinerkushtia.com | editor