সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
কুষ্টিয়ার করোনা ডেডিকেটেড ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডগুলোর শয্যাসংকটে রোগীদের ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে। সেখানেও পা ফেলার জায়গা নেই, রোগীতে ঠাসা। প্রায় প্রতিটি রোগীর মাথার কিনারে রাখা অক্সিজেন সিলিন্ডার। রোগীর স্বজনেরা পাশে বসে সিলিন্ডার পাহারা দিচ্ছেন। যাতে কেউ নিয়ে যেতে না পারেন।
শয্যাসংখ্যা ছাড়িয়ে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৭৩ জন। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ রোগী ২০০ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ সকালে হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দোতলার অস্ত্রোপচারকক্ষের সামনে অন্তত ২০ জন মানুষ এদিক-ওদিক বসে আছেন। তাঁদের স্বজনেরা দোতলার করোনা ওয়ার্ডগুলোয় ভর্তি। একটু সামনে যেতেই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীকে দেখা গেল। তাঁরা রোগীর স্বজনদের ওয়ার্ডে প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ করছেন। আরও কয়েকজন কর্মী রোগীদের অক্সিজেন লাগানোয় সহযোগিতা করছেন। কেউ আবার ওষুধ কিনে দিচ্ছেন। এ সময় আছিয়া নামের এক নারী হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে এসে স্বেচ্ছাসেবকদের জানালেন, তাঁর মা পারুল খাতুনের অবস্থা ভালো না। শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে। অক্সিজেনও শেষ হয়ে গেছে। দ্রুত সিলিন্ডার লাগবে। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ এক কর্মীকে নিয়ে দ্রুত একটি বড় সিলিন্ডার নিয়ে ছুটলেন পারুলের ওয়ার্ডে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোতলার পাঁচটি ওয়ার্ড ঘুরে একটি শয্যাও ফাঁকা পাওয়া গেল না। প্রতিটি ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় রোগীরা শুয়ে আছেন। খানিক আগে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। তাতে বারান্দার রোগীদের পানির ছিটা পড়েছে। বারান্দায় পানি পড়ে ধুলো ভিজে কাদা হয়ে গেছে। ওয়ার্ডবয় ও স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করা কর্মীরা ছোট–বড় সিলিন্ডার নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ছুটছেন। তাঁরা জানান, এক সপ্তাহে এ হাসপাতালে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৫০ জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতাল রোগীতে ঠাসা।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, প্রতিদিন অন্তত ৫০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন হচ্ছে। সেখানে আছে ৫৪৭টি সিলিন্ডার। রিফিল করতে দেওয়া হলে তখন একটু সমস্যায় পড়তে হয়। এ ছাড়া ছয় হাজার লিটারের সেন্ট্রাল অক্সিজেন রয়েছে। সেটা দিয়ে ১০ জনকে ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়। রোগী বেড়ে যাওয়ায় মাঝেমধ্যে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তিনি আরও জানান, জুনের তুলনায় চলতি জুলাই মাসে রোগীদের চাপ আরও বাড়তে পারে। কুষ্টিয়ার যে পরিস্থিতি, তাতে বোঝা যাচ্ছে করোনার পিক আওয়ার এখনো আসেনি।
গত ২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়ার করোনা ডেডিকেটেড ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে করোনায় ১৩ জন ও উপসর্গ নিয়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে
হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ১৯, নতুন শনাক্ত ১৯৩
গত ২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়ার করোনা ডেডিকেটেড ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় ১৩ জন ও উপসর্গ নিয়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়। এক দিনে এ হাসপাতালে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা।
আজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৬০৯টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ১৯৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে অন্তত ৫০ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে আজ সকাল আটটা পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৭৩ জন। তাঁদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ২০০ জন। অন্যরা করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতালে আরও ১০ জন রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৫০ থেকে ৬০–এর মধ্যে। তাঁদের অবস্থা গুরুতর। হাসপাতালের যে পরিস্থিতি, তাতে মনে হচ্ছে এ রকম হয়তো আরও দুই সপ্তাহ থাকতে পারে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন বলেন, হাসপাতালে আরও ১০ জন রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৫০ থেকে ৬০–এর মধ্যে। তাঁদের অবস্থা গুরুতর। হাসপাতালের যে পরিস্থিতি, তাতে মনে হচ্ছে এ রকম হয়তো আরও দুই সপ্তাহ থাকতে পারে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, এখন পর্যন্ত জেলায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৪৭৫ জনের। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৬৮৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৬৩ জন। নতুন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় সর্বোচ্চ ৩৬, দৌলতপুরে ৪৫, কুমারখালীতে ৩১, ভেড়ামারায় ২৭, মিরপুরে ২৩ ও খোকসায় ৩১ জন আছেন। বর্তমানে কুষ্টিয়ায় করোনা রোগী আছেন ২ হাজার ৪৯৩ জন। তাঁদের মধ্যে হাসপাতালে আইসোলেশনে ২৬৫ ও হোম আইসোলেশনে আছেন ২ হাজার ২২৮ জন
Posted ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৪ জুলাই ২০২১
protidinerkushtia.com | Md Golam Kibria (Jibon)