কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ভুয়া করোনা নেগেটিভ সনদ বিক্রির অভিযোগে বুধবার (২৬ আগস্ট) অভিযান চালায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচএম আনোয়ারুল ইসলামের দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট (ইপিআই) মাহফুজুর রহমানকে আটক করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুর থানা পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। আটককৃত মাহফুজুর রহমান মিরপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া এলাকার মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, পাবনার রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চাকুরীর জন্য করোনা নেগেটিভ রেজাল্ট দিতে হচ্ছে। এই সুবাধে অবৈধ পন্থায় ৭শ- ১৫শ টাকায় করোনার শুরু থেকেই মিরপুর হাসপাতাল থেকে ভুয়া করোনা নেগেটিভ সনদ দিয়ে আসছিলো মাহফুজুর রহমান।
পরে অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এসময় তার কাছ থেকে ভুয়া করোনা সনদের ফটোকপি, কম্পিউটারের হার্ডডিক্স, পেনড্রাইভ ও সীল উদ্ধার করে। এদিকে মিরপুর হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত কয়েকজন চিকিৎসক, সম্প্রতি বদলী হওয়া প্রধান অফিস সহকারী, ল্যাব টেকনিশিয়ান, স্থানীয় কয়েকটি ক্লিনিকের মালিক এবং কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবের টেকনিশিয়ানের জোগসাজসে করোনার ভুয়া সনদ দিয়ে আসছিলো।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিস। তারা অভিযোগের সত্যতাও পায়। এসময় করোনার ভুয়া সনদ বিক্রির কারণে তদন্ত কমিটি সম্প্রতি বদলী হওয়া প্রধান অফিস সহকারী মাহাবুর রহমান এবং ল্যাব টেকনিশিয়ান মাহফুজুর রহমানকে সতর্ক করা হয়। এর পরে বেশ তড়িঘরি করে দুইদিন পরেই মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে বদলি নিয়ে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে যান মাহাবুর রহমান। তবে তার অবৈধ কাজকর্ম শুরু করেন মাহাফুজুর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন জানায়, শুধু ল্যাব টেকনিশিয়ান মাহফুজুর রহমানের একার পক্ষে এ এমন কাজ করা সম্ভব না। মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী ইনচার্জ সানাউল্লাহ, কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের কর্মচারীও জড়িত রয়েছে। এছাড়া মিরপুর উপজেলা আমলা ইউনিয়নের বুরাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএসসিপি’র চাকুরী ছেড়ে দিলেও তার ১২ মাসের বেতন তুলে নিয়েছিলো মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান অফিস সহকারী মাহাবুর রহমান।
পরে এ ঘটনার সত্যতা প্রমানিত হওয়ায় তাকে দ্রুত বদলি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ব্যপারে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সম্প্রতি বদলী হওয়া প্রধান অফিস সহকারী মাহবুব রহমান জানান, আমি মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ছিলাম। এখন সাতক্ষীরার শ্যামনগরে রয়েছি। আমি মাহাফুজের সাথে করোনা নেগেটিভ ভুয়া সনদ দেওয়ার সাথে জড়িত নই।
আমার বিরুদ্ধে এমন কোন অভিযোগ নেই। ইতিপূর্বে বুরাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএসসিপি’র ১২ মাসের বেতন তুলে নেওয়ার ঘটনাও অস্বীকার করেন তিনি। মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী ইনচার্জ সানাউল্লাহ জানান, হাসপাতালের ভুয়া করোনা নেগেটিভ রেজাল্টের যে চক্র রয়েছে তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আর ইতিপূর্বে বুরাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএসসিপি’র ১২ মাসের বেতন তুলে নিয়েছিলো সে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার কারণে সম্প্রতি বদলী হওয়া প্রধান অফিস সহকারী মাহবুব রহমান ১২ মাসের মোট টাকা ফেরত দিয়ে দেন তিনি।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডাঃ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। স্যাম্পল কালেকশন না করেই সে যে কাজটি করে আসছিল সেটি মহা অন্যায়। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভাগীয় মামলা হবে। ইতিমধ্যে তার বদলি অর্ডার এসেছে। তদন্ত চলছে। কারা তার সাথে জড়িত তা খুঁজে বের করা হবে।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আব্দুর রহমান বলেন,‘মাহফুজুর যে কাজটি করেছে তা কঠিন অপরাধ। তার সাথে আরো কার কার যোগ আছে তা খুঁজে বের করা হবে। একই সাথে জেলার কোথাও যাতে এমন ঘটনা ঘটে সে জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে।
তিনি বলেন,‘ পজেটিভ ব্যাক্তি যদি নেগেটিভ সনদ নিয়ে কাজে যোগদান করে তাহলে সেখানে করোনা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মানুষের জীবন নিয়ে এ ধরনের প্রতারনা করা বড় অপরাধ।’
উল্লেখ্য, গত বুধবার (২৬ আগষ্ট) দুপুরে অভিযান চালিয়ে মাহফুজুর রহমানকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক ও পেন ড্রাইভ জব্দ করা হয়। বুধবার অভিযানের মধ্যেই মাহফুজের বদলি অর্ডার আসে।
Posted ৩:১৪ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৮ আগস্ট ২০২০
protidinerkushtia.com | editor