কুষ্টিয়ায় করোনার সম্মুখযোদ্ধা মানবিক ডাক্তার মুসা কবির করোনা আক্রান্ত
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসাপাতালে করোনা রুগীদের চরম সাহসীকতার সাথে নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন মানবিক ডাক্তার এস এম মুসা কবির। তিনি গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ একদিকে যেমন তার সুস্থতা কামনায় দোয়া করছেন অন্যদিকে করোনা রুগীদের কি হবে এই ভেবে নানা শংকায় পড়েছেন তারা।
একজন সত্যিকারের সেবাদানকারী চিকিৎসক হিসাবে এবং গরীব ধনী সব শ্রেণীর মানুষের কাছে সেবার মাধ্যমে প্রিয় হয়ে উঠেছেন ডাঃ মুসা কবির। জননন্দিত এবং জনপ্রিয় এই চিকিৎসকের রোগমুক্তি কামনা করে বিভিন্ন যায়গায় দোয়া মাহফিল হচ্ছে।
গত বছরের জুলাইয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। সে সময় টানা তিন মাস রোগীদের সেবা দিয়েছেন। নিজের দুই সন্তানও এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। তারপরও থেমে থাকেননি। এবার করোনা মহামারির শুরু থেকেও তিনি একইভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। গত পাঁচ মাসে তাঁর বিরামহীন সেবার কারণে জেলায় কোভিড আক্রান্ত রোগীদের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছেন তিনি।
এই চিকিৎসকের নাম এ এস এম মুসা কবির। তিনি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জ্যেষ্ঠ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে তিনি রোগীদের বিরামহীনভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।’ হাসপাতাল সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ৪০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ডের দায়িত্ব মুসা কবিরের ওপর।
করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আসা ও কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের দুটি পৃথক ওয়ার্ডে রাখা হয়। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হওয়ায় হাসপাতালে থাকা এসব রোগী তাঁর পরামর্শই বেশি নেন। কুষ্টিয়া জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও জ্বর–সর্দির মতো উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসায় মুসা কবিরই ভরসা।
শুধু জেলা শহরই নয়, বাকি ছয়টি উপজেলা থেকেও তাঁর কাছে সরাসরি এবং মোবাইল ফোনে সেবা নিয়ে থাকেন কোভিড রোগীরা। শুধু চিকিৎসাই নয়; করোনাকালে বিভিন্নভাবে তিনি অসহায় মানুষের পাশেও দাঁড়িয়েছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের মানসিক শক্তি জোগাতে তিনি কাউন্সেলিং করেন। মধ্যরাতেও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে করোনা রোগী ও উপসর্গ নিয়ে থাকা রোগীদের টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে থাকেন। জেলার অন্য হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণও তিনি দিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনা ইউনিট স্থাপনের নির্দেশ আসার পর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকারের সঙ্গে করোনা বিষয়ে যৌথভাবে কাজ শুরু করেন। হাসপাতালের সামনে আরপিটিআই হোস্টেলে করোনা ওয়ার্ড স্থাপন থেকে শুরু করে বর্তমান হাসপাতাল কম্পাউন্ডে করোনা ওয়ার্ড পর্যন্ত তিনি নিরলশ ভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে হাসপাতালের মতো সবকিছু প্রস্তুত করা হয়। ২২ এপ্রিল প্রথম সেখানে একজন কোভিড রোগী ভর্তি হন। এরপর ধীরে ধীরে সেখানে রোগী বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে সেখানে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগী ভর্তি থাকেন। প্রথম থেকে হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স কোভিড রোগীদের সেবা দিতে ভয় পেয়েছিলেন। তাঁদের সাহস জুগিয়েছেন মুসা কবির।
সেখানে রোগীদের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি গভীর রাতে কোনো রোগীর অবস্থা খারাপহলে তিনি ছুটে গেছেন। আবার নবীন চিকিৎসকেরা তাঁর পরামর্শ নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতেন। জুলাই মাসের শুরুর দিকে হাসপাতালে কোভিড রোগীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সে সময় এই চিকিৎসকের বৃদ্ধ বাবা-মা তাঁকে নির্দিষ্টভাবে কোয়ারেন্টিনে (১৪ দিন) থাকার কথা বলেছিলেন। কিন্তু রোগীদের কথা ভেবে তিনি থাকতে পারেননি।
Posted ৪:০৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১
protidinerkushtia.com | editor