আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের একটি উদ্যোগই বদলে দিল কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের চিত্র। সম্প্রতি তার উদ্যোগে সরকারি অক্সিজেন সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরো ১০০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার।
এই রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করেছেন আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা। সাংসদের এই মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন চিকিৎসক, রোগী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার (২৯ জুন) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জন ঘোষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন- প্রিয় সাংসদ মাহবুবউল আলম হানিফ ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। আজ বেলা দেড়টার দিকে হঠাৎ ফোন। আইশোলসনে থাকা ছাত্রলীগের কর্মীরা জানালেন, সেখানে অক্সিজেনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পাঁচজন রোগীর স্বজনেরা ছুটাছুটি করছেন। দ্রুত বিষয়টি হানিফ ভাইকে জানানো হয়। এরপর মাত্র আধাঘন্টার মধ্যে সেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ট্রাক চলে যায়।
এ বিষয়ে হানিফ বলেন, এটা সাহায্য নয়, আমার নৈতিক দায়িত্ব। সমাজের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা। প্রয়োজনে অক্সিজেনসহ যাবতীয় সেবা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তিনটি ওয়ার্ড করোনা রোগীতে ঠাসা। সেখানে ১০০ শয্যার বিপরীতে বর্তমানে ১১৭ জন রোগী ভর্তি আছেন। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা আছে ১০ জনের জন্য। এ ছাড়া ৩৪৭টি ছোটবড় সিলিন্ডার আছে। কিন্তু রোগীদের চাপে হাসপাতালে থাকা সরকারি অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা যেন কোনোভাবেই চাহিদা মেটাতে পারছিল না।
২২ জুন রাতে অক্সিজেনের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়। এমন খবর জানার পরপরই কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাংসদ মাহবুবউল আলম হানিফ এক ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে অক্সিজেনসহ ১০০ সিলিন্ডার সরবরাহের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও ব্যবসায়ী নেতা অজয় সুরেকাকে নির্দেশ দেন। অজয় সুরেকা দ্রুত শহরের মনির অক্সিজেন ডিপোতে গিয়ে সিলিন্ডার নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দেন।
করোনা ওয়ার্ডে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করছেন ছাত্রলীগের স্বেচ্ছাসেবকেরা।
ঈদুল ফিতরের আগে সাংসদ হানিফ কুষ্টিয়া জেলার ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। করোনাকালে অসহায়দের খাদ্যসহায়তার জন্য তিনি করোনা তহবিল গঠন করেন। সেখানে যে পরিমাণ টাকা ওঠে, সেখান থেকে কিছু টাকা ভবিষ্যতের জন্য বাঁচিয়ে রেখেছিলেন হানিফ। ৬ ও ৭ মে প্রায় ১ কোটি টাকা বাজেটে কুষ্টিয়া মহিনি মিল মাঠ ও শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে ১১ হাজার অসহায় কর্মহীন মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাহবুবউল আলম হানিফ।
এরপর করোনা তহবিলের ভবিষ্যতের জন্য বাঁচিয়ে রাখা টাকা থেকে মূলত অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করেন আওয়মী লীগের এই নেতা।এর পর আরো ১০০ সিলিন্ডার (বড় আকার) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই সিলিন্ডারগুলোও সাংসদ হানিফের অনুরোধে মনির অক্সিজেন ডিপোর মালিক মনিরুল ইসলাম কোনো টাকা ছাড়াই সরবরাহ করেছেন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, করোনার এই মুহূর্তে সাংসদ হানিফ যে মহতী কাজ করছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। চিকিৎসক হিসেবে তারা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন এবং হাসপাতাল থেকে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু অনেক জেলায় অক্সিজেন–সংকটে রোগী মারা যাচ্ছেন। এটা যাতে কুষ্টিয়ায় না হয়, সে জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা খুবই ভালো। যার যেটুকু সম্ভব, এভাবে জেলার বিত্তবানেরা এগিয়ে এলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।
এ বিষয়ে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ বার করে হলেও জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, চিকিৎসক সবার সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের প্রয়োজনের কথা শোনা হয়। সেটা পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। কুষ্টিয়াতে প্রতি মাসেই দুই থেকে তিনবার যাওয়া হয়। গেলেই হাসপাতালে যাই। নিজে হাসপাতালের চিত্র দেখে সবকিছু করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে আরো করব।