নিজস্ব প্রতিনিধি
গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলাকারীরা কেউ পার পাবে না: হানিফ
সাম্প্রতি কুষ্টিয়ায় কর্মরত এশিয়ান টেলিভিশনে স্টাফ রিপোর্টার হাসিবুর রহমান রিজুর ওপর নিশংস হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, গণমাধ্যম কর্মীর উপর হামলাকারীরা কেউ পার পাবে না। যখনই এই হামলা ঘটনা আমি শুনেছি তখনই আমি কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারকে জানিয়েছিলাম এই হামলার সাথে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ।তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করে । বাকি আসামিদেরকে গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চলছে।
২৮ জুন শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টায় কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডে এমপির নিজ বাসভবনে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময়কালে সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ও গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলার বিষয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিদ্যুৎ ভোগান্তি নিয়ে হানিফ এমপি বলেন, ২০০৯ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করে যাত্রা শুরু করলাম তখন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা ছিল মাত্র সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট অথচ তখনই আমাদের চাহিদা ছিল প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াট।
তাৎক্ষণিক চাহিদা ও ভবিষ্যতে দেশে শিল্প কল-কারখানার উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এ বিষয়ে সামনে রেখে একটি লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতার অর্জনের জন্য কাজ শুরু করে সরকার। ইতিমধ্যে আমাদের ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করা হয়েছে।
হানিফ বলেন, বর্তমানে দুটি কারণের মানুষের কিছুটা হলেও ভোগান্তি হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা হয়েছে কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইনগুলো যথাযথভাবে এখনো ঠিক হয়নি। যার কারনে অনেক জায়গায় লোডশেডিং হচ্ছে। দ্বিতীয় আরেকটি বড় সমস্যা হয়েছে , বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় এটা আমাদের অনেক বেশি। সরকারকে এ বিষয়ে অনেক বেশি ভর্তুকি দিতে হয়। ভর্তুকির চাপ কমানোর জন্য দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। করোনা মহামারীর দুর্যোগ ও রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অর্থনৈতিক মন্দা এবং তেলের দাম উচ্চ মূল্য বৃদ্ধি হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছিল। যার কারণে সরকারকে অনেক ভর্তুকি দিতে হয়েছিল। এখন তেলের দাম একটি সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। আমরা আশা করছি এখন বিদ্যুতের মূল্য এডজাস্ট করা হবে।
এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, জাতীয় সংসদে বিদ্যুতের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে আমি বলেছি। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে প্রকল্পগুলো প্রাইভেট সেক্টরগুলোতে দেওয়া হয়েছে। যেগুলো ২০১৩, ১৪, ১৫ সালের চুক্তি ছিল। সেগুলোর প্রতি কিলো বিদ্যুৎ ১৫ সেন্ট ,১৮ সেন্ট ছিল। বর্তমানে এখন প্রাইভেট সেক্টরে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প গুলোর আমাদের যে ট্যারিফ দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ ১০ সেন্টর নিচে চলে আসছে। এজন্য জাতীয় সংসদে বলেছি প্রাইভেট সেক্টরে বিদ্যুতের মূল্য পূর্ণ মূল্যায়ন করা হোক। তখন সরকার ও গ্রাহকদের ওপর চাপ কমে আসবে। আমি আশা করছি সরকার এ বিষয় নিয়ে বিবেচনা করবে এবং এবছরের মধ্যে একটি সমাধান হবে।
বেগম খালেদা জিয়ারকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ এনে হানিফ এমপি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় আছেন। গত কালকে আমরা বলেছি দেশের সকল মানুষ সুস্থ থাকুক। তিনি একটি দলের শীর্ষ নেতা । সেই হিসাবে তিনিও দ্রুত আরোগ্য মুক্ত হোক , দ্রুত সুস্থ হোক , সেটা আমরা প্রত্যাশা করি । কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে এই ধরনের বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের বক্তব্য বিএনপি’র চরম মিথ্যাচারের একটি অংশ। কারণ বেগম খালেদা জিয়ার নামে মামলা হয়েছিল ২০০৭ সালে। অর্থাৎ তত্ত্ববোধক গভমেন্টের সময় এই মামলা হয়। সে মামলায় পরবর্তীতে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের আইনজীবীরা আদালতে বেগম খালেদা জিয়াকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলে আদালত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দণ্ড দিয়েছিলেন। এটা আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত। বর্তমান সরকারের এ মামলায় কোনো ভূমিকা ছিল না। এখনো কোনো ভূমিকা নেই। দেশের আইন সকলের জন্যই সমান। সেই বিবেচনায় বেগম খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত হিসেবে তিনি কারাগারে ছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দয়ায় ও মানবতার কারণে বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে না থেকে এখন বাসভবন থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিএনপি মিথ্যাচার না করে তাদের এখনো সুযোগ আছে আইনি প্রক্রিয়ায় গিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে যদি মুক্ত করতে পারে। সেটাই সবার জন্য ভালো হবে। দেশের মানুষ তাদেরকে ধন্যবাদ জানাবে।
দেশের মধ্যে ভারতের রেল সংযোগ নিয়ে বিএনপি বিরোধিতামূলক বক্তব্যের জবাবে হানিফ এমপি বলেন, বিরোধিতার জন্য বিএনপি বিরোধীতা মূলক কথাবার্তা বলছে। পৃথিবীর বহু দেশে মধ্যে রেল ও সড়ক সংযোগ আছে। এগুলো তো নতুন কিছু নয়। আমাদের দেশের রেল লাইন করিডোর যদি কোন দেশে যায়, অথবা ট্রেন যদি যায় , অথবা ব্যবহার করেন, এটা দোষের কিছু না। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে পৃথিবীর বহু দেশে সাথে অন্য দেশের এমন সংযোগ লাইন আছে। ফ্রান্স ও স্পেনে এই ধরনের যোগাযোগ আছে, জার্মানির সাথে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আছে। ইউরোপে অনেক দেশের সাথে অন্যান্য দেশের রেল ও সড়ক সংযোগ সহ সব ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম আছে।
এসময় কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের (কেপিসি) ও সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের (কেপিসি) সিনিয়র সহ-সভাপতি মিলন উল্লাহ, শেখ হাসান বেলাল, নির্বাহী সদস্য ও এশিয়ান টেলিভিশনের মিরপুর ও ভেড়ামারা প্রতিনিধি ফয়সাল চৌধুরীসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
Posted ৩:২৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪
protidinerkushtia.com | editor