রকিবুল ইসলাম (রকি)
রকিবুল ইসলাম (রকি), গাংনী প্রতিনিধিঃ- জীবন মানে অঘোষিত যুদ্ধ, বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই হয় বিভিন্ন প্রতিকূলতার সাথে। তেমনি লড়াই করে চলেছেন দিনমজুর প্রতিবন্ধী ইব্রাহীম (৪৫)জীবন সংগ্রামী এ ব্যাক্তি মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের তেরঘরিয়া গ্রামের খলিল শেখের ছেলে। জানা যায়, জন্মথেকে ইব্রাহীমের বাম পা নেই। প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেওয়া টাই যেন তার ছিলো মহাপাপ। অভাবের সংসারে পড়ালেখা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ থেকে যায়।আমাদের সমাজে কিছু মানুষ থাকেন যারা আত্মসম্মানের সাথে বাঁচতে ভালোবাসেন।কোনো পরিস্থিতিতে তাদের জীবন পাতায় অসম্ভব বলে শব্দটি নেই,যে কোন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে লড়াই করতে পারে,নিজের ও পরিবারের জন্য। শারীরিক ত্রুটি জীবনের উপর প্রভাব পড়লেও মোকাবেলা করতে জানে।ভিক্ষাবৃত্তিকে ঘৃণা করে পরিশ্রম করে হলেও আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচবেন বলেই নেমেছেন জীবন সংগ্রামের এ পথে। শারীরিক অক্ষমতা নিয়েই ক্র্যাচে ভর করে অন্যের জমিতে কাজ করে কোনমতে খেয়ে না খেয়ে চলছে পাঁচ সদস্যদের এ সংসার। অন্যের জমিতে কাজ করার সময় ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে তিনি কথা বলেন,আমি জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী, এক পা না থাকায় ক্র্যাচের উপর নির্ভর করে চলাফেরা করতে হয়। অভাবের সংসারে বসে থাকলে তো পেটের ভাত জুটবে না,তাই অন্যের জমিতে কাজ করে কোনমতে খেয়ে না খেয়ে দিন চলে যায়। মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে বাপের দেওয়া জমিতে জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস।সরকারি ভাবে ২২ কাঠা চাষের জন্য জমি ও প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়েছি। দরিদ্রদের জন্য সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্প চালু থাকলেও ইব্রাহীমের কপালে আর কিছু জোটেনি। বিভিন্ন মহলে ধর্ণা দিয়েও লাভ হয়নি। উল্টো সরকারী সহযোগিতার আশায় দালালের খপ্পরে পড়ে খুইয়েছেন ছয় হাজার টাকা। তিনি আরও বলেন,একেতো আমি প্রতিবন্ধী তার উপর সাম্প্রতিক সময়ে ২টি কিডনিতে পাথর ধরা পড়ায় চিকিৎসার খরচ যোগাতে সরকারি ভাবে দেওয়া ২২ কাঠা জমি লিজ দিয়েছি।
আক্ষেপ করে বলেন,শুনেছি সরকার নাকি গরীবদের ঘর দেয় সোলার প্যানেল দেয় কিন্তু আমার কপালে কিছু জুটলো না। এমনকি স্যানিটারী পায়খানা পর্যন্ত পায়নি। আমার ভাঙ্গা ঘরে সোলার রাখার জায়গা নেই বলে হয়তো দেয়নি আজও। একজনের ইনকামে দিয়ে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর।নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা, কিছুতেই অভাব পিছু ছাড়ছে না।
এ বিষয়ে কথা হয় কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি মোঃ আমজাদ হোসেনের সাথে,তিনি বলেন ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যতদূর সম্ভব সহযোগিতা করা যায়,তা দেয়ার চেষ্টা করবো আমি।
ইব্রাহীমের একটি পা নেই এ অবস্থাতেও তিনি আর পাঁচ জনের মতো করে জমিতে কাজ করে চলেছেন। ক্র্যাচটি শরীরের সাথে আটকিয়ে নিয়ে পায়ের মত করে ব্যাবহার করছেন। কষ্ট হলেও অন্যদের মতো করে কাজ করে চলেছেন। কোন কিছু না করার কত অযুহাত থাকতে পারে,কিন্তু যাদের হাত পা নেই,তারা যখন সাধারণ মানুষের থেকেও বেশি কিছু করে,তা অনেকের কাছে নতুন করে অনুপ্রেরণা যোগায়
ইব্রাহীমের সামনে এখন ধোয়াশার মত সুবিশাল ছায়াপথ। শেষ জীবনে কিভাবে সংসার চলবে,এমন ভাবনাতে কাটে প্রতি মূহুর্ত। তাইতো দুশ্চিন্তায় রোগে শোকে নুয়ে পড়েছেন,সবার ভালোবাসা ও সহযোগিতা পেলে কোন কিছুতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না।
Posted ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২০
protidinerkushtia.com | Md Golam Kibria (Jibon)