আব্দুল্লাহ বিন জোহানী তুহিন
দৌলতপুরে এক ও দুই টাকার কয়েন একেবারেই অচল
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে এক ও দুই টাকার ধাতব মুদ্রা বা কয়েন একেবারেই অচল। এমনকি ভিক্ষুককে দিতে চাইলেও এক ও দুই টাকার কয়েন নিতে চান না। রাষ্ট্রীয়ভাবে এই কয়েন অচল না হলেও উপজেলার ব্যবসায়িরা সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকও তা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে রীতিমতো দুর্ভোগে আছেন উপজেলার মানুষ।
এদিকে হাটবাজারে দোকানিরাও কেনাবেচায় এক ও দুই টাকার কয়েন না নেওয়াতে বিপাকে সাধারণ মানুষ। রিকশা, ভ্যান বা মুদি দোকানদারেরাও কেনাকাটায় এক ও দুই টাকার কয়েন নিচ্ছে না। হাটবাজার সহ ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এক ও দুই টাকার কয়েন দেখলেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে লেগে যায় তর্ক। কোনও পক্ষই এসব ধাতব মুদ্রা নিতে রাজি হয় না। উপজেলার এক ও দুই টাকার অচল মুদ্রা সম্পর্কে মানুষের সঙ্গে কথা হলে এমনই সব তথ্য জানা যায়।
লেনদেন বা কেনাকাটায় কাগজের নোটের পাশাপাশি বাজারে প্রচলিত যেকোনও মূল্যমানের কয়েন যে-কেউ নিতে বাধ্য। কিন্তু দৌলতপুরে এক ও দুই টাকার কয়েন লেনদেন না হওয়ায় ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কাছে পড়ে আছে হাজার হাজার টাকার কয়েন।
থানা বাজার এলাকার চা দোকানি নজরুল ইসলাম বলেন, পাইকারি দোকানিরা কয়েন নিয়ে মালামাল দেয় না।আমরা ছোট দোকানিরা কয়েন নিলে তা চালাবো কোথায়। তাই আমরাও নিতে পারি না। যদি পাইকারি দোকানিরা কয়েন নিতো তাহলে আমরাও কয়েন নিয়ে মালামাল বিক্রি করতে পারতাম। এক ও দুই টাকার কয়েন ছাড়া মালামাল বিক্রি করতে অসুবিধা হয় বলেও তিনি জানান।
পাইকারি মালামাল বিক্রেতা রুবেল হোসেন বলেন, খুচরা ব্যাবসায়ীরা তো এক ও দুই টাকার কয়েন নিয়ে আসে না আমাদের কাছে। তবে আমাদের অসুবিধা এই কয়েন চালাইতে, কারন ব্যাংক বেশি কয়েন নিতে চাই না। ব্যাংক যদি বেশি কয়েন নিতে চাই তাহলে কয়েনে আমাদের লেনদেন করতে কোনো সমস্যা নাই।
মাসুদ রানা নামের একজন ক্রেতা বলেন, পাশের উপজেলা ভেড়ামারাতে সব রকম কয়েন চলে আর দৌলতপুরে একেবারেই অচল। আসলে উপজেলা প্রশাসনের গাফিলতির কারনে এক ও দুই টাকার কয়েন নিচ্ছে না বাজারের দোকানিরা। প্রশাসন কঠোর ভাবে মনিটরিং করলে বাজারে ব্যবসায়িরা কয়েনে লেনদেন করতে বাধ্য।
অগ্রহণী ব্যাংক লিঃ এর দৌলতপুর শাখার ব্যবস্থাপক সেলিম তোহা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পরিপত্রের মাধ্যমে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ কয়েন নেওয়ার জন্য আমাদের একটি নির্দেশনা দিয়েছে। সেই মোতাবেক আমরা বাজারে গিয়েও কয়েন পাচ্ছি না। আমরা কয়েন নিচ্ছি না এই কথাটি ঠিক নয়। আমার মনে হচ্ছে কোথাও ভুল-বোঝাবুঝি হচ্ছে।
এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল জব্বার বলেন, সরকার যেহেতু এক ও দুই টাকার কয়েন বাজেয়াপ্ত করেনি তাহলে ব্যবসায়িরা কেনো নিবে না! আগামী মাসিক সভায় আমি উপজেলার ১৪ টি ইউপি চেয়ারম্যানকে বলে দিব উনারা যেনো বাজার কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দেয় এক ও দুই টাকার কয়েনে লেনদেন করতে।
দেশে বর্তমানে এক টাকা, দুই টাকা ও পাঁচ টাকার ধাতব মুদ্রা চালু আছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব কয়েন অচল না হলেও সরকারি-বেসরকারি কোনো ব্যাংকই তা নিতে চাচ্ছে না। কয়েনের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে নতুন দুই টাকা ও পাঁচ টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও অলিখিতভাবে ব্যাংকগুলোতে নিষিদ্ধ হয়ে পড়ায় কোটি কোটি টাকার মুদ্রা অলস পড়ে থাকছে ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের কাছে। এতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। বাংলাদেশ কয়েনেজ অর্ডার, ১৯৭২ হওয়ার পরের বছর ১৯৭৩ সাল থেকে বিভিন্ন মূল্যমানের ধাতব মুদ্রা ছাড়তে শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
Posted ৬:৩৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর ২০২২
protidinerkushtia.com | editor