ঈদের আগে অনেক সময় আইন-শৃংখলার অবনতি হয়। চুরি ডাকাতি ছিনতাই বেড়ে যায়। তবে এবার কুষ্টিয়ার অবস্থা ভিন্ন। জেলা পুলিশের তৎপরতায় ঈদের আগে এবার নির্বিঘ্নে ব্যবসা বাণিজ্য করছে জেলার ব্যবসায়ীরা। এর জন্য জেলা পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছে এখানকার ব্যবসায়ীরা।
কুষ্টিয়া কোরবানির গরুর জন্য বরাবরই বিখ্যাত। জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত গরু চলে যায় ঢাকা চট্টগ্রামের বাজারে। তাই এ সময় বিপুল পরিমাণ অর্থের হাতবদল ঘটে। তাই দুষ্কৃতকারীরা এসময় সুযোগের সন্ধানে বসে থাকে।
সুযোগ পেলেই তারা গরুর ট্রাকে ডাকাতি, গরু বেচার টাকা ছিনতাই করে। গ্রুপে তা-ও বিক্রেতাদের সর্বস্ব লুটে নেয়। তবে এবার আর সে সুযোগ পাচ্ছে না সমাজবিরোধীরা। জেলা পুলিশের কঠোর তৎপরতায় নির্বিঘ্নে চলছে তাদের ব্যবসা। এবারের ঈদের আগে কোথাও কোনো ছিনতাই বা ডাকাতির খবর পাওয়া যায়নি। খুলনা বিভাগের বৃহত্তম পশুহাট কুষ্টিয়ার আলামপুর হাট।
হাটের দিনগুলোতে এখানে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক ব্যাপারী আসে হাটে গরু কিনতে। সাপ্তাহিক হাটের দিনে তাই পুলিশের বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে দুস্কৃতিকারীরা কোন অপকর্ম করতে না পারে। পাশাপাশি গরু কিনে নিয়ে ফেরার সময় পথে যাতে তাদের সমস্যায় না পড়তে হয় সে জন্য রয়েছে পুলিশের বিশেষ টিম। অন্যদিকে গো খামারিরা যাতে গরু বেচা টাকা নিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে পারে সে ব্যাপারেও রয়েছে পুলিশের বিশেষ তৎপরতা।
এ ব্যাপারে ঢাকার গরু ব্যবসায়ী মহিদুল ইসলাম জানান, এর আগে আলামপুর পশু হাট থেকে গরু নিয়ে যাওয়ার সময় পথে তারা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। অনেক সময় গরুর ট্রাকে ডাকাতি হয়ে যেত, তাদের টাকা ছিনতাই হয়ে যেত। তবে এবার কুষ্টিয়ার পুলিশ যেভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে তাতে সমাজবিরোধীরা কোনো সুযোগই পাচ্ছে না অপকর্ম করতে। তিনি বলেন, এবার গরু ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে আলামপুর হাট থেকে গরু নিয়ে গন্তব্যে ফিরতে পারছেন।
এ কারণে তিনি কুষ্টিয়া জেলা পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। চট্টগ্রামের গরু ব্যবসায়ী আলফাজ মিয়া বলেন, বছরের অন্য সময় আলামপুর হাট থেকে গরু কিনে ফেরার সময় কোন চাপ না থাকলেও ঈদের সময় তাদের বাড়তি টেনশন থাকত। তবে এবার কুষ্টিয়া পুলিশের কঠোর পদক্ষেপের কারণে দুষ্কৃতী-সন্ত্রাসীরা তাদের টিকিটিও ছুঁতে পারছে না। জেলার আইলচারা গ্রামের গো খামারি আলমগীর হোসেন বলেন, আলামপুর পশুহাটে তারা নির্বিঘ্নে গরু বেচতে পারছেন হাটের দিনগুলোতে। সেখানে পুলিশের সতর্ক প্রহরা থাকে, এ কারণে তারা গরু বিক্রি করে নির্বিঘ্নে টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন। তিনি সারা বছর পুলিশের এমন তৎপরতা জারি রাখার জন্য দাবি জানান।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, পুলিশ বাহিনীর কাজ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। এই ব্রত নিয়েই তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, কুষ্টিয়া গরু উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। কোরবানির ঈদের সময় এ গরু বাণিজ্য কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়। এ সময় সমাজবিরোধীরা অনেক সময় গরু ক্রেতা বিক্রেতাদের টাকা ছিনতাইসহ গরুর ট্রাক লুটপাটের চেষ্টা চালায়।
এটা মাথায় রেখে এবার পুলিশের একাধিক বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম গরু ব্যবসায়ীদের জানমালের নিরাপত্তায় অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করছে। এর মাধ্যমে পুলিশ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। পুলিশ জনগণের বন্ধু এটা মানুষ বুঝতে পেরেছে। পুলিশ সুপার বলেন, যেকোনো মূল্যে কুষ্টিয়ার আইন-শৃঙ্খলার বর্তমান অবস্থা ধরে রাখা হবে।
Posted ৪:১৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৫ জুলাই ২০২০
protidinerkushtia.com | editor