রবিবার | ১লা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



সত্যের পথে অবিচল | ২৪ ঘণ্টা বাংলা সংবাদ

বুয়েটের তরুণ দুই গবেষক আবিষ্কার করলেন বন্যার সাথে বসবাস উপযোগী ভাসমান বাড়ি

মোঃ গোলাম কিবরিয়া (জিবন)

বুয়েটের তরুণ দুই গবেষক আবিষ্কার করলেন বন্যার সাথে বসবাস উপযোগী  ভাসমান বাড়ি

ফাইল ফটো

বাংলাদেশের অধিকাংশ প্লাবন-সমভুমিই বন্যাপ্রবন এবং প্রতি বছরই দেশের অনেক জেলা বন্যা কবলিত হয়।


নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী জনপদ বন্যায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বন্যার পানি লোকালয়ে ও বাড়িঘরে প্রবেশ করলে তাদের বাড়িঘরের সবকিছু ফেলে রেখে নিজেদের জীবন ও গবাদি পশুগুলো সাথে নিয়ে দূরবর্তী কোনো উচু জায়গায় আশ্রয় নিতে হয়।

বুয়েটের “কোর বাংলাদেশ” গবেষনা প্রজেক্টে এমন কিছু প্রযুক্তির পরীক্ষা চালিয়েছে যার দ্বারা বন্যার সময়েও মানুষজন তদের সব জিনিসপত্র সহ তাদের বাড়িতেই থাকতে পারবে কোন ধরনের ক্ষতি ছাড়াই।

এই গবেষনা প্রজেক্টে বিভিন্ন ধরনের ডাচ-প্রযুক্তি কিভাবে বাংলাদেশের আবহাওয়া ও সামাজিক পরিবেশে বাস্তবায়ন করে বন্যা নিয়ন্ত্রন করা যায় সেটির সফল পরীক্ষা চালানো হয়েছে।


সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের রানিগ্রামে উভচর বাড়ি ও মেঝে-পুনঃস্থাপিত ঘর এই দুটি প্রযুক্তি নির্মান সম্পন্ন হয়েছে। বন্যার সাথে জনপদের মানুষজনের খাপ খাইয়ে নিয়ে বসবাস করার সক্ষমতা বৃদ্ধি এই প্রযুক্তির মূল লক্ষ্য

 


ঊভচর বাড়ি মুলত সমতল মাটির উপরে বানানো হয়েছে এবং যখন পানি ওই জায়গায় প্রবেশ করবে বাড়িটি পানির উপরে ভেসে উঠে ।

বাড়িটির জায়গায় পানি আসলে ও চলে গেলে এটি ঠিক ফেরিঘাটের মতন পানির উচ্চতার সাথে উপরে ভেসে উঠে ও নিচে নেমে আসে। আশেপাশে ভেসে না গিয়ে সঠিক জায়গায় ধরে রাখার জন্য নোঙ্গর করার ব্যাবস্থা আছে।

উভচর বাড়িটি বানানো হয়েছে মুলত প্লবতার মুলনীতি অনুসরন করে। বাড়িটির ভিত্তি এমনভাবে বানানো যেন স্বাভাবিক সময়ে এটি মাটির উপরে বসা থাকে এবং বন্যার পানি আসলে পানি বাড়ির নিচে প্রবেশ করে সমস্ত জিনিসপত্র, মানুষজন ও গবাদিপশু সহ বাড়িটিকে ভাসিয়ে তোলে। এর ভিত্তি নির্মানে এক্সপ্যান্ডেড পলিস্টেরিন (ইপিএস) ব্যবহার করা হয়েছে এবং মূল বাড়িটি টিনের তৈরি।

প্রযুক্তি বাস্তবায়নে সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ও স্থানীয় এনজিও শার্প মাঠপর্যায়ে কাজ করেছেন। প্রযুক্তিগুলোকে আরো বাস্তবসম্মত ও ব্যবহার উপযোগী করে বানাতে এর পরিকল্পনা, নকশা ও নির্মানসহ সকলস্তরে স্থানীয় জনগন, ছাত্রছাত্রী ও স্থানীয় মিস্ত্রীদের সংযুক্তকরন ও স্থানীয় কাচামালের ব্যাবহারের মাধ্যমে সামাজিক অংশগ্রহন নিশ্চিত করা হয়েছে।


 

 

 


প্লাস্টিকের বোতল ও পাইপ দিয়ে একটি স্তর এমনভাবে বসানো হয়েছে যেন বন্যার পানি মাটির মেঝের উপরে উঠে আসলে সেই পানিতে বোতল ও পাইপের স্তর সহ কাঠের মেঝেটি ভেসে উঠে। মুখবন্ধ বোতল ফাপা জাহাজের মতন আচরন করে এবং পানির উর্ধমূখী বল ঘরের সকল জিনিসপত্র সহ ঘরের মেঝেটিকে ভাসিয়ে তোলে।

অংশগ্রহন ও দ্বায়িত্ব পালনের মাধ্যমে। “কোর বাংলাদেশ” গবেষনা প্রজেক্টে এইসব ধাপ স্বল্প সময়ে ও স্বল্পস্তরে বন্যা-সহনশীল প্রযুক্তিগুলোর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে বাংলাদেশে সাধারন লোকালয়ে সঠিক বন্যা-ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নতির চেস্টা করা হচ্ছে। এই প্রজেক্টটি নেদারল্যান্ডস অর্গানাইজেশন্স অফ সাইন্টিফিক রিসার্স (এনডব্লিউও) এর অর্থ সহায়তায় এবং বাংলাদেশের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউট, বুয়েট ও নেদারল্যান্ডের আইএইসই-ডেলফ, ডেলফ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি এবং রিসার্স কোম্পানি এইচকেভি এর গবেষনা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে এইসব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের বন্যা ব্যাবস্থাপনার টেকসই দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পরীক্ষা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তিগুলোর কার্যকারিতা ও উপকারিতা মানুষজনকে আকর্ষন করেছে। বানভাসী অনেক মানুষ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এই প্রযুক্তিসম্পন্ন বাড়ি বানানোর ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বৃহৎ পরিসরে বন্যা-নিয়ন্ত্রক এইসব প্রযুক্তির নির্মান ও ব্যাবহার শুরু হলে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও মানুষের দুর্ভোগ অনেকাংশেই কমে যাবে।
লেখকঃ
প্রকৌশলী আশিক ইকবাল
রিসার্স এসিস্টেন্ট, কোর বাংলাদেশ প্রজেক্ট, পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউট, বুয়েট।
প্রকৌশলী নাদিয়া নওশিন
পিএইচডি ফেলো, কোর বাংলাদেশ প্রজেক্ট, পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউট, বুয়েট।

Facebook Comments Box

Posted ৬:৩৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০

protidinerkushtia.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(786 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

মোঃ শামীম আসরাফ, সম্পাদক ও প্রকাশক
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় :

ঝাউদিয়া বাবলু বাজার, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া ফোনঃ +৮৮ ০১৭৬৩-৮৪৩৫৮৮ ই-মেইল: protidinarkushtia@gmail.com

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
error: Content is protected !!