প্রিন্ট এর তারিখঃ অক্টোবর ৯, ২০২৪, ১১:০২ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ২৯, ২০২১, ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ
সীমিত পরিসরের লকডাউনের মধ্যেও সোমবার ঢাকা ছেড়েছে মানুষ। বিকল্প পরিবহণে অতিরিক্ত ভাড়া পরিশোধ করে চলাচল করেছেন তারা। এসব মানুষকে রিকশা, সিএনজি, প্রাইভেট কার এবং পিকআপে করে চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে সোমবার ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ছিল অনেক কম। এদিকে সীমিত আকারের লকডাউনের প্রথম দিনে চট্টগ্রাম ও বরিশাল নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে ছিল রিকশা আর প্রাইভেট কারের দাপট। গণপরিবহণ না থাকায় দিনভর চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে কর্মস্থলমুখী মানুষদের।
সরেজমিন রাজধানীর উত্তরা-আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী-আমিন বাজার এবং সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী দিয়ে অনেক মানুষকে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। এসব স্পটে সোমবার একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে। একই সঙ্গে অফিস খোলা থাকায় ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে ঢাকায় আসা মানুষের তীব্র ভোগান্তির মুখোমুখি হতে দেখা গেছে। এসব কর্মজীবী মানুষকে কয়েকগুণ ভাড়া পরিশোধ করতে দেখা গেছে।
ঢাকার অন্যতম প্রধান প্রবেশমুখ সাইনবোর্ড এলাকায় অনেক মানুষকে গ্রামে যেতে দেখা গেছে। সোমবার ঢাকা ছাড়া মানুষের সংখ্যা ছয় দিনের তুলনায় কম ছিল। শহরের বাস বন্ধ থাকায় রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারে চড়ে মানুষ চলাচল করেছে। সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী প্রবেশমুখে সীমিত পরিসরের লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশের কঠোর অবস্থান লক্ষ করা গেছে।
সায়েদাবাদে চাঁদপুরের বাবুরহাটের যাত্রী কালাম মিয়া বলেন, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে একটি প্রাইভেট কার পেয়েছি। জনপ্রতি ভাড়া ১৮০ টাকা করে দিয়ে আমরা এসেছি। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের ভিড় ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। শিমরাইল মোড়ে ঘরমুখো শত শত মানুষের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। গত দুদিনের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা কম ছিল। এজন্য তিন দিনের সীমিত লকডাউনে গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও পিকআপের মাধ্যমে গন্তব্যে রওয়ানা হন অনেক। এতে গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া।
রিকশাচালক আবদুল হক বলেন, দুদিন সড়কে যাত্রীদের ভিড় থাকলে সোমবার সকাল থেকে তেমন কোনো যাত্রী নেই। এ কারণে রিকশাচালকদের উল্লেখযোগ্য আয় হচ্ছে না। যাত্রী আমিনুর রহমান বলেন, আমি লক্ষ্মীপুর যাব। প্রাইভেট কারে ভাড়া চায় ১ হাজার টাকা। গাড়ি কম থাকায় যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
অতিরিক্ত ভাড়া সম্পর্কে প্রাইভেট কার চালক বাবুল হোসেন বলেন, লকডাউনে আমাদের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। পুলিশকে টাকা দিতে হয়। এজন্য ভাড়া কিছুটা বেশি নেওয়া হচ্ছে। জানতে চাইলে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, সড়কে গাড়ির চাপ অনেকাংশে কম। জরুরি কারণ ছাড়া প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস চলাচলে মামলা দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামে গণপরিবহণের অভাবে চরম ভোগান্তি : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, সীমিত আকারের লকডাউনের প্রথম দিনে চট্টগ্রাম নগরীতে বন্ধ ছিল গণপরিবহণ। নগরজুড়ে দেখা যায় রিকশা আর প্রাইভেট কারের দাপট। গণপরিবহণ না থাকায় দিনভর চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে কর্মস্থলমুখী মানুষদের। বিশেষ করে পোশাক শ্রমিক এবং নিুআয়ের মানুষের দুর্ভোগ ছিল বেশি। গন্তব্যে পৌঁছাতে গুনতে হয়েছে বাড়তি ভাড়া। অনেকে হেঁটে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওয়ানা হন। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখা গেছে অফিসগামী মানুষের জটলা।
লকডাউনের কারণে সোমবার সকাল থেকে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক হয়ে পড়ে গণপরিবহণশূন্য। বন্ধ ছিল বেশির ভাগ মার্কেট ও দোকানপাট।
সীমিত লকডাউনে বরিশালের সড়কে ভিড় : বরিশাল ব্যুরো জানায়, সীমিত আকারে ঘোষিত লকডাউনের মধ্যেও নগরীর প্রধান সড়কসহ শাখা সড়কে জনসাধারণের উপস্থিতি দেখা গেছে। যান্ত্রিক বাহন না চললেও বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে মানুষের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। অনেকে মাস্ক না পরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাণিজ্যিক এলাকার বেশকিছু ব্যবসায়ীকে দোকানের দরজা আংশিক খুলে ব্যবসা পরিচালনা করতে দেখা গেছে। এদিকে নগরবাসীকে ঘরে রাখতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ২০টি ও জেলা প্রশাসনের ১৫টি দল কাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কের প্রবেশমুখে পুলিশ বসিয়েছে চেকপোস্ট।
লকডাউনের প্রথম দিনে বরিশাল নগরীর বাণিজ্যিক এলাকা সদর রোড, গির্জা মহল্লা, চকবাজার, বাজার রোডে জনসাধারণের বেশ উপস্থিতি ছিল।
বরিশাল জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গৌতম বাড়ৈ জানান, জেলার ১০ উপজেলায় ১টি করে ও বরিশাল নগরীতে পাঁচটি দল সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় মাঠে রয়েছে। জনসাধারণকে ঘরে রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, বরিশালে চলমান সীমিত লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশের ২০টি দল কাজ করছে। নগরীর প্রবেশমুখগুলোতে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানান তিনি।