কয়েক দিন আগেও লঞ্চে যাত্রীর ভিড় ছিল না। ঈদ যাত্রার শুরু থেকেই গতকাল বৃহস্পতিবার ভিড় বেড়ে গেছে। সকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে হাজির হচ্ছে। দুপুরের পর এই ভিড় আরো বাড়তে থাকে। গাদাগাদি করে, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ডেকে চেপে ভ্রমণ করছে যাত্রীরা। ঝুঁকিপূর্ণ এমন ভ্রমণে যাত্রীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে বলা ছাড়া যাত্রীদের সুরক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষ লঞ্চ ভরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ছাড়ার ব্যবস্থা করছে।
গতকাল বিকেল ৩টায় লঞ্চ টার্মিনালের সামনের চিত্তরঞ্জন এভিনিউয়ে তীব্র যানজট দেখা গেছে। ভোলার লালমোহনে যাবেন রিফাত হোসেন নামের এক যাত্রী। তিনি শ্রীনগর-৩ লঞ্চে ভ্রমণ করছেন। এই যাত্রী কালের কণ্ঠকে বলছিলেন, ‘গুলিস্তান থেকে সদরঘাট আসতে এক ঘণ্টার বেশি লেগেছে। তবে লঞ্চে উঠতে সমস্যা হয়নি। কিন্তু ভয় পাচ্ছি মানুষের ভিড় দেখে। এত মানুষ, গায়ে গা লাগিয়ে বসেছে সবাই। কারো মুখে মাস্ক নেই। কেউ সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করছে না।’
ঢাকা থেকে বরগুনাগামী সপ্তপর্ণা-১০ লঞ্চে দেখা গেল, ডেক থেকে কেবিনের বারান্দা কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ডেকে বসে থাকা যাত্রীদের বেশির ভাগেরই মুখে মাস্ক নেই। অনেকে ভিড়ের মধ্যে বসেই খাবার খাচ্ছে। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে দেখা গেল লঞ্চটিতে আরো যাত্রী তোলা হচ্ছে।
জানতে চাইলে লঞ্চটির কর্মচারী সোহরাব হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা তো হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখছি; কিন্তু কেউ ব্যবহার করে না।’ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) দুই কর্মী বললেন, এখনই লঞ্চটিকে ঘাট ছাড়তে বলা হয়েছে। দেখা গেল বিআইডাব্লিটিএ এবং নৌ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা ঘাট পরিদর্শনে রয়েছেন। শেষমেশ কর্তৃপক্ষ ও নৌ পুলিশের চাপের মুখে সপ্তপর্ণা-১০ লঞ্চটি বিকেল ৩টার দিকে ঘাট ছেড়ে যায়।
বিকেল ৫টার দিকে বরিশালগামী একটি লঞ্চের যাত্রী সাইফুল ইসলাম বলছিলেন, ‘গতকাল (বুধবার) সদরঘাটে এসেছিলাম, এত যাত্রী ছিল না। লঞ্চওয়ালার আজ মনমতো যাত্রী ওঠাচ্ছে। সিট ফাঁকা রেখে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই।’
বিকেলে ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, বেতুয়া, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, হিজলা, মুলাদী, আমতলী, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, চাঁদপুরসহ অনেক রুটের লঞ্চে ভিড় দেখা গেল।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা লঞ্চের কেবিনের যাত্রী আবু রায়হান ও তাঁর স্ত্রী মুনতা হেনা জানালেন, করোনার কারণে গত রোজার ঈদে গ্রামের বাড়ি যেতে পারেননি তাঁরা। এবার যাচ্ছেন। তবে সদরঘাটে এসে ভিড় দেখে তাঁরা আতঙ্ক বোধ করছেন। লঞ্চে মাইকে নামাজ পড়তে বলা ছাড়া কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের সুরক্ষার ব্যবস্থাই করেনি। লঞ্চ কর্তৃপক্ষের কারণে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে যারা ডেকে বা এদিক-সেদিক বসে যাচ্ছে তাদের মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই।
Posted ৩:৪৯ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ৩১ জুলাই ২০২০
protidinerkushtia.com | faroque