পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য কুষ্টিয়ায় নির্মাণ করা হয়েছে সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে ৫তলা বাড়ি। ‘মন ভোলানো কাঠের বাড়ি’র নিচতলায় রেস্টুরেন্ট আর উপরে দর্শনার্থীদের সময় কাটাতে খোলা জায়গা রাখা হয়েছে।
বিক্রি হচ্ছে নানা কারুকাজের বিভিন্ন হস্তশিল্প। শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির কাছে হওয়ায় প্রতিদিনই ভিড় করছে দর্শনার্থীরা।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহে ব্যক্তি মালিকানায় ১২ শতক জমির উপর সম্পূর্ণ কাঠের ৩৫ ফুট উচ্চতার এই বহুতল বাড়ি। ৫তলা এই পর্যটনকেন্দ্রে হাত ধরাধরি করে বসবাস ইতিহাস-ঐতিহ্য আর লোকসংস্কৃতির।
পরিবেশবান্ধব এই স্থাপনাটি গড়ে তোলা হয়েছে সম্পূর্ণ কাঠের দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলীতে। কাঠের সিঁড়ি, মেঝে ও দেওয়ালে রয়েছে নানা কারুকাজ আর রঙিন আল্পনা। এর নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে তাল, মেহগনি ও শাল কাঠ। বিষয়টা অবিশ্বাস্য মনে হওয়ায় আর বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির কাছে হওয়ায় এখানে প্রতিদিনই ভিড় করছে পর্যটকরা।
কিছু সমস্যা দূর করে এই অঞ্চলকে পর্যটন এলাকা করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।কুষ্টিয়া জেলা ইউনাইটেড অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতিশেখ হাসান বেলাল ও সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক নাহিদ হাসান তিতাস বাড়িটি দেখে বলেন, ইট পাথরে থেকে আমরা কেমন যেন হয়ে গেছি। সেই জায়গায় সম্পূর্ণ কাঠের বাড়ি তাও আবার পাঁচতলা। এটা একটি অসাধারণ উদ্যোগ। কাঠের ৫তলায় আসলেই আমাদের অনেক কিছু শেখার বা জানার আছে। এখানে দৃষ্টিনন্দন অনেক কারুকাজের হস্তশিল্প রয়েছে।
তিনি বলেন, যেহেতু রবীন্দ্র কুঠিবাড়িকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র করার দাবি দীর্ঘদিনের। সেই কুঠিবাড়ির পাশেই এই কাঠের বাড়ি। এই এলাকা যদি পর্যটন এলাকা করা যায়, তবে এইসব উদ্যোগকে কিছুটা হলেও উৎসাহ দেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজের শিক্ষার্থী আরজুমান বলেন, কুঠিবাড়ি দেখতে এসেছিলাম। এখানে এসে একজনের কাছে খবর পেয়ে এই কাঠের বাড়ি দেখতে এসেছি। আসলে প্রথমে শুনে বিশ্বাসই হয়নি যে সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে ৫তলা বাড়ি হতে পারে। এখানে এসে দারুণ এক অনুভূতি হচ্ছে। ঘুরে ঘুরে প্রতিটি তলা দেখলাম। অসাধারণ লাগলো। আমাদের দেশের ইতিহাস কৃষ্টি কালচার সবই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে।
কুষ্টিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ইনজামামুল হক বলেন, বিশেষ করে ইসলামিক বিষয়গুলো এখানে যত্ন করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অনেক ছবি তুললাম। কাঠের সিঁড়ি দিয়ে যখন উপরে উঠেছি তখন এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। আসলেই এখানে ঘোরার মতো জায়গা। শুধু সড়কটা সংস্কার আর গাড়ি পার্কিংয়ের ভালো ব্যবস্থা দরকার।
দর্শনার্থী শামিমা খাতুন বলেন, ইউটিউবে দেখে এখানে এসেছি। অনেক ভালো লাগছে। সম্পূর্ণ নতুন কিছু দেখলাম। ছোট মেয়ের জন্য কিছু কাঠের জিনিস কিনেছি। পরিবার নিয়ে নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য কাঠের বাড়িটি অসাধারণ।
কাঠের ব্যবসা থেকে কাঠের বাড়ির মালিক স্থানীয় আব্দুর রশিদ জোয়ার্দার বলেন, বিশেষ করে মুসলমানদের পারিবারিকভাবে পর্যটন ও বিনোদনের জন্য তিনি ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বাড়িটি নির্মাণ করেছেন। একসাথে ৩০০ জনের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বাড়িটি নির্মাণে ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এটি টিকিয়ে রাখতে হলে প্রতিনিয়ত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। আশা করছি টিকিট কাউন্টার, রেস্টুরেন্ট ও হস্তশিল্পের ব্যবসা থেকে যে পরিমাণ আয় হবে তা দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও আরও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ইসলামী পার্ক নির্মাণসহ বাড়িটির আরও উন্নয়নের ইচ্ছা আছে।
উল্লেখ্য, ২০ টাকা টিকিটের বিনিময়ে দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পর্যটনকেন্দ্রটি খোলা রাখা হচ্ছে।
Posted ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২০
protidinerkushtia.com | editor