ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সিঙ্গিয়া কলোনিপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের লিচুগাছে আমও ঝুলছে
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সিঙ্গিয়া কলোনিপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের লিচুগাছে আমও ঝুলছেপ্রথম আলো
আমগাছে আম ধরে, জামগাছে জাম। সে নিয়ম অনুযায়ী লিচুগাছে লিচু ছাড়া অন্য ফল ধরার কথা নয়। কিন্তু এ নিয়ম ভেঙে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সিঙ্গিয়া কলোনিপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের একটি গাছে লিচুর থোকায় আমও ঝুলতে দেখা গেছে। এ নিয়ে এলাকায় এখন চলছে ব্যাপক আলোচনা।
লিচু ও আমের টিস্যু সিস্টেম এক না হওয়ায় আম ও লিচুর গ্রাফটিংও সম্ভব নয়। লিচুর সঙ্গে আমগাছের ডাল জোড়া লেগেছে, এমন উদাহরণ নেই। উদ্ভিদতত্ত্বে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই।
অধ্যাপক বিধান চন্দ্র হালদার, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বিধান চন্দ্র হালদার বলেন, ‘ঘটনাটি ফেসবুকে দেখেছি। লিচু ও আমের পুষ্পমঞ্জুরী যেখানে হয়, সেটা লম্বা। লিচুরটা লম্বা হলেও আমটির বোঁটাটি স্বাভাবিকের তুলনায় খুব খাটো। এসব দেখে বিষয়টি খটকা লাগছে। লিচু ও আম এক পরিবারের উদ্ভিদ নয়। ক্রোমোজম সংখ্যা যদি এক হয়, তবে অনেক সময় ঘটতে পারে। তবে লিচু ও আমের ক্ষেত্রে এটা অবিশ্বাস্য। লিচু ও আমের টিস্যু সিস্টেম এক না হওয়ায় আম ও লিচুর গ্রাফটিংও সম্ভব নয়। লিচুর সঙ্গে আমগাছের ডাল জোড়া লেগেছে, এমন উদাহরণ নেই। উদ্ভিদতত্ত্বে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই।’
অধ্যাপক বিধান চন্দ্র হালদার বলেন, ‘কেউ আঠা দিয়ে লিচুর ডালে আমটি লাগিয়েও দিতে পারেন। এখন আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমটি কয়েক দিনের মধ্যে ঝরে পড়লে বুঝবেন চমক সৃষ্টির জন্য কেউ আমটি লিচুর ডালে আটকে দিয়েছিলেন। আর আমটি যদি বড় হতে থাকে, তখন সেটাকে অস্বাভাবিক ঘটনা বলা যেতে পারে। তখন এটা নিয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে।’
লিচুগাছটির মালিক আবদুর রহমান বলেন, বছর পাঁচেক আগে তাঁর জামাতা তাঁকে লিচুগাছের চারাটি এনে দেন। এরপর তিনি বাড়ির একপাশে চারাটি লাগান। নিয়মিত পরিচর্যায় বছর তিনেক পর গাছটিতে লিচু ধরতে শুরু করে। এবার গাছটি মুকুলে ভরে যায়। কিছুদিন পর লিচুর গুটির আকার বড় হতে শুরু করে। গত শনিবার সকালে তাঁর নাতি হৃদয় ইসলাম এসে তাঁকে জানায়, লিচুগাছে একটা আম ধরেছে। নাতির কথা শুনে তিনি এটাকে দুষ্টুমি মনে করেছিলেন। পরে গিয়ে গাছে লিচুর থোকার একপাশে একটি আম দেখে অবাক হন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে বহু মানুষ এটি দেখতে ভিড় করছেন বলে জানান তিনি।
গতকাল সোমবার বিকেলে আবদুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গাছটি লিচুর গুটিতে ভরা। একপাশে একটি থোকায় ১৭টি লিচুর মধ্যে একটি সবুজ আম ঝুলছে। লিচুর ডগা লম্বা হলেও আমটির বোঁটা অনেকটা ডালঘেঁষা। এটা দেখতে যাঁরা ভিড় করেছেন, তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন আবদুর রহমানসহ বাড়ির লোকজন।
লিচুগাছে আম ধরার কথা শুনে ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের শাহপাড়া থেকে গাছটি দেখতে এসেছেন ওবায়দুল রহমান। তিনি বলেন, ‘এটা ব্যতিক্রম ঘটনা। ঘটনাটি নিজের চোখে দেখে গেলাম।’ সদর উপজেলার আউলিয়াপুর এলাকার শিক্ষক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই প্রাকৃতিকভাবে হয়নি। কৃত্রিমভাবে এটা ঘটানো হয়েছে। লিচুগাছের ডালে আগাছের ডাল কলম করে লাগিয়ে দেওয়ায় এমনটি হতে পারে।’ তবে এটা মানতে নারাজ দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের এমএসসির শিক্ষার্থী মো. মোসাদ্দেক হোসেন। তিনি বলেন, ‘আম ও লিচু দুটি আলাদা পরিবারের। আম Anacardiaceae ও আর লিচু Sepindaceae পরিবারের ফল গাছ। একই পরিবারভুক্ত উদ্ভিদের ক্ষেত্রে গ্রাফটিং সম্ভব। আবার লিচুগাছে আম ধরার ঘটনাটিও বিজ্ঞানসম্মত নয়।’
একটি গাছে মাত্র একটি মাত্র আম ধরল। এটা কীভাবে ধরল, তা এ মুহূর্তে বোঝা মুশকিল।
আবু হোসেন, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ঠাকুরগাঁও
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিনাজপুরের উদ্যান কেন্দ্রের উপপরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, প্রাকৃতিক কোনো কারণে বা আঘাত পেলে গাছ যদি নিজে থেকে তা সারিয়ে তুলে, তবে গাছে বিকৃত আকৃতির ফল ধরতে পারে। এ কারণে অনেক সময় লিচুর বোঁটায় আম আকৃতির ফল দেখা যেতে পারে। তবে লিচুগাছে আম হলে সেটা হবে অস্বাভাবিক ঘটনা। এটার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা নেই।
লিচুগাছে আম ধরার কথাটি শুনে গতকাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের দুই কর্মকর্তাকে তা পর্যবেক্ষণে পাঠান উপপরিচালক আবু হোসেন। পরে তিনি বলেন, ‘একটি গাছে একটি মাত্র আম ধরল। এটা কীভাবে ধরল, তা এ মুহূর্তে বোঝা মুশকিল। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’