
কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নই, ভেঙেছে কোটি কোটি বাঙালীর হৃদয়।
গত শুক্রবার রাতে মাদ্রাসার দুই শিক্ষকের প্ররোচনায় দুই ছাত্র কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুর করে। এতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিখ্যাত তজর্নি ও মুখমন্ডলের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ ক্ষতি বাঙালীর জাতির কাছে পোষাবার নই। এ লজ্জা ঘুচবে না কোনো কিছুতেই।
১৯৭১ সালের সাতই মার্চের ভাষণে নিজের তর্জনি উঁচু করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এরপর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার তর্জনিটিও বিখ্যাত হয়ে পড়েছিল। সেদিনের পর অনেক কবি তাদের কবিতায় বঙ্গবন্ধুর সেই বিখ্যাত তর্জনিটির কথা লিখেছেন। আর সেই তর্জনিটাকেই যেন বারবার লক্ষ্য বানিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সময় তার বিখ্যাত তর্জনিটিও ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল ঘাতকেরা। এবারও যেন তারই পুনরাবৃত্তি ঘটলো কুষ্টিয়ায়।
এ যেন বঙ্গবন্ধুর উদ্ধত তর্জনির সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের আজন্ম ক্ষোভ। এদিকে গতকাল কুষ্টিয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের মামলার চার আসামীকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দুপুর সোড়া ১টায় আদালতে নেওয়া হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিশিকান্ত সরকার জানান, গ্রেপ্তারকৃত চার আসামীদের কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত-১ এর বিজ্ঞ বিচারক রেজাউল করিমের আদালতে মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য ভাস্কর্য ভাংচুরের সাথে সরাসরি জড়িত দুই আসামী আবু বক্কর ওরফে মিঠুন এবং সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদকে ১০ দিন করে এবং সহায়তকারী দুই শিক্ষক আল আমীন ও ইউসুফকে ৭ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে এবং আসামীদের জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
আজ হবে রিমান্ড শুনানী।এর আগে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে গ্রেফতার ও সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রেস বিফ্রিং করেন খুলনা রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি ড.খ মহিদউদ্দিন। কুষ্টিয়া পৌরসভার সচিব কামাল উদ্দিনের দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি তদন্ত নিশিকান্ত সরকার জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে মাওলানা মামুনুল হক ও মাওলানা ফয়জুল করিমের বয়ানে উদ্বুদ্ধ হয়ে ও গ্রেফতারকৃত দুই শিক্ষকের দেয়া সাহসে নাহিদ আর মিঠুন এ কাজ করেছে।
কিন্তু এর পেছনে কারা জড়িত রয়েছে, কারো ইন্ধন রয়েছে কিনা, থাকলে তাদের খুজে বের করতে আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। তাই কুষ্টিয়া আদালতে আসামীদের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আসামীরা হলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপ নগর গোলাবাড়ি গ্রামের সামছুল আলম এর ছেলে সরাসরি ভাষ্কর্যে ভাঙচুরকারী সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ (২০) ও মিরপুর উপজেলার শিংপুর গ্রামের সমসের মৃধার ছেলে সরাসরি ভাষ্কর্যে ভাঙচুরকারী আবু বক্কর ওরফে মিঠুন (২০)।
এদের সহযোগী শিক্ষক আল আমিন ও ইউসুফ আলী। এরা কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া পশ্চিমপাড়ার ইবনি মাসউদ মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক। ঘটনার পর বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষন করে আসামীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করে পুলিশ। গত শুক্রবার রাত ২টা ১৬ মিনিটে অভিযুক্ত আসামী মাদ্রাসা ছাত্র সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ ও আবু বক্কর ওরফে মিঠুন হাতুড়ি দিয়ে কুষ্টিয়া শহরের ৫ রাস্তার মোড়ে নির্মানাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্যে ভাংচুর করে। এর প্রতিবাদে কুষ্টিয়াসহ সারাদেশ উত্তাল রয়েছে।